বাইশা বা বাইশ কবির মনসামঙ্গল

1

বাইশা বা বাইশ কবির মনসামঙ্গল


বাইশা বা বাইশ কবি


বহুশ্রুতি এবং বহুকবির চিন্তাচর্চায় মনসামঙ্গল কাব্যধারা বিকশিত হয়ে ওঠে। তবে দৈনন্দিন পূজা ও পাঠে ঘটে জনপ্রিয়তা এবং কাব্যের কোজাগরী প্রতিষ্ঠা লাভ হয় পূর্ববঙ্গে। কাব্যটিকে ভালোবাসার জন্য স্বভাবতই ভালো লাগার উপযোগী বিভিন্ন কবির রচিত পংক্তিগুচ্ছকে একটি সঙ্কলনের মাধ্যমে গ্রথিত করে একটি সম্মেলক কাব্য বা সঙ্গীত সংকলনের অস্তিত্ব থাকা ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এরই নাম 'বাইশা’ অর্থাৎ বাইশজন কবির রচনায় এই সঙ্কলন সমৃদ্ধ। চট্টগ্রাম, বরিশাল, ত্রিপুরা, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট ইত্যাদি অঞ্চলেই এর প্রচলন বেশি ছিল বলে মনে হয়। কেননা এ কাব্যের প্রামাণিকতা পুঁথি দ্বারা সমর্থিত নয়, সম্পাদকের ভূমিকায় সজ্জিত হয়ে ছাপার অক্ষরে আত্মপ্রকাশ করে।

কবিদের নাম পরিচয়

'বাইশা’ বাইশজন কবির কবিতায় সমৃদ্ধ। এই বাইশ জন কবি হলেন

(১) বিশ্বেশর (বর্ধমান জেলার), (২) অকিঞ্চন দাস (৩) রঘুনাথ দ্বিজ (৪) রমাকান্ত (৫) জগন্নাথ বিপ্র (৬) বংশী দাস (৭) সীতাপতি (৮) রাধাকৃষ্ণ (৯) বল্লভ ঘোষ (১০) নারায়ণ দেব (১১) গোপীচন্দ্র (১২) জানকীনাথ (১৩) কমলনয়ন (১৪) যদুনাথ, (১৫) বলরাম, (১৬) হরিদাস ভট্ট, (১৭) রামনিধি, (১৮) পাণ্ডুয়া, (১৯) অনুপচান্দ ভট্ট, (২০) রামকান্ত, (২১) মহিদাস দ্বিজ, (২২) দ্বিজ হরিদাস। কিন্তু বিভিন্ন সংস্করণগুলিতে এই নামের সঙ্গতি দেখা যায় না। এঁরা সকলেই হয়ত কবি নন, কেউ কেউ গায়েন রূপেও উপস্থিত।

গুরুত্ব

এই কাব্য সংকলনের গুরুত্ব উপেক্ষা করা যায় না। কারণ

প্রথমত, এরকম সঙ্কলিত গ্রন্থের প্রকাশ সাহিত্যের ইতিহাসের ধারাবাহিক আলোচনার পক্ষে প্রয়োজনীয়। প্রাচীন সাহিত্যে দেখা গেছে 'সদুক্তিকর্ণামৃত', 'গাথাসপ্তশতী'র মতো রচনা, ইংরেজী সাহিত্যে দেখা গেছে টমসনের Miscellany-Poems written by the most Emi nent Hands' (1684)। সেদিক দিয়ে তাই এই ধরনের একটি আঞ্চলিক কাব্য সঙ্কলন থাকা নিশ্চয় বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এই সঙ্কলন সম্পর্কে বিরুদ্ধপক্ষের প্রথম আপত্তি হল এই যে, এর প্রামাণিকতা পুঁথি দ্বারা সমর্থিত হয়নি।

দ্বিতীয়ত, এই সংকলন দুটিতে যে বাইশজন কবির নাম পাওয়া যায় সেই নামের মধ্যেও সর্বত্র সঙ্গতি নেই। মনে হয় অনেক গায়েন কবি ভণিতায় পরিচয় দিয়েছেন।

তৃতীয়ত, পূর্ববঙ্গ এই সংকলনের জন্ম ক্ষেত্র বলে দাবী করা হলেও এর ভাষার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাক্‌রীতি লক্ষ করা যায়,


এতেক কৌশল করি করিনু চয়ন।

তবু না পেলেম পোড়া পুরুষের মন।

এ পরিবর্তন সম্পাদক-কৃত বলে অভিযোগ।








পার্থ চট্টোপাধ্যায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top